মারুফুল ইসলাম প্রসঙ্গে

প্রারম্ভিক জীবন

মারুফুল ইসলাম ১৯৬৩ সালের ২৯শে মার্চ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা রফিকুল ইসলাম এবং মাতা আনোয়ারা বেগম। তিনি ১৯৭৯ সালে ফেনী জেলা পাইলট হাই স্কুল থেকে মাধ্যমিক পাস করেন এবং ১৯৮১ সালে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৮৪ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতক (সম্মান) ডিগ্রি এবং ১৯৮৫ সালে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। তিনি ২০০৫ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেস্টন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচ.ডি. ডিগ্রি অর্জন করেন।

কাব্যরীতি

মারুফুল ইসলাম ১৯৮০-র দশকে কবিতা লিখতে শুরু করেন। তাঁর কাব্য চেতনায় আধুনিক মানুষের নেতি, হতাশা ও দ্রোহ যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে প্রেম ও রোমান্টিকতা। তাঁর প্রকাশভঙ্গি অনুচ্চ। শব্দচয়ন মনোযোগসমৃদ্ধ। কবি মারুফুল ইসলাম স্বাতন্ত্র্যে সমুজ্জ্বল। তাঁর কবিতায় বাংলাদেশের প্রকৃতি, মানুষের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য চিন্তাভাবনা, বোধ, অনুভূতি, প্রেম-বিরহ, প্রতিদিনের ছবি, মানুষে-মানুষে সম্পর্ক এই সব বিষয় মূর্ত হয়। তিনি এই সব প্রকাশে নিজস্ব একটি পথ অনুসন্ধান করেছেন এবং তাঁর একান্ত স্বাক্ষর রেখেছেন, যা তাঁকে অন্য কবি থেকে আলাদা করেছে নিঃসন্দেহে। ‘অসামর্থ্য ও অর্জন দুটি বিপরীত দিক তাঁর কবিতায় অসাধারণভাবে উঠে এসেছে। কবির নিজস্ব জগৎ ও তাঁর চিন্তা অত্যন্ত সুন্দরভাবে প্রকাশ পেয়েছে কবিতায়[৩] তাঁর কাব্যগ্রন্থ সাঁইজি বের হয় ২০১৬ সালে। তখনই কবিতাপ্রেমিকরা উপলব্ধি করেন যে, বাংলা কবিতায় তিনি একটি নতুন পথ খুঁজে পেয়েছেন। ওই কাব্যগ্রন্থে তিনি লালনের বাউল ভাবনাকে আধুনিক চিন্তা, যুগচেতনা, মনস্তত্ত্ব এবং দেহতত্ত্বের আলোতে সাজিয়েছেন। এর ফলে কবিতাগুলোতে লোকদর্শনের সঙ্গে নাগরিক দর্শনের একটি সমন্বয় ঘটেছে। কবিতাগুলো একইসঙ্গে মানুষের ইতিহাসের সঙ্গে বর্তমানের একটি সংযোগ ঘটিয়েছে।[৪] জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান-এর মতে, কবি মারুফুল ইসলামের কবিতার শক্তি হচ্ছে তাঁর নিজস্ব ভাষাভঙ্গি। প্রেম, প্রকৃতি, জীবনবোধ, সমকাল সর্বোপরি হৃদয়ের গভীর গোপন অনুভবকে কবিতায় তিনি রূপায়িত করেছেন পরম মমতায়।[৫] তাঁর নতুন করে পাব বলেশীর্ষক কাব্যগ্রন্থ সম্পর্কে কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘…নতুন করে পাব বলের পেছনে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। নতুন করে পাব বলের কবিতাগুলির বিষয়বৈচিত্র্য ব্যাপক। বেশির ভাগ কবিতা লিরিকধর্মী। ছন্দে, চলনে প্রতিটি কবিতায় এক-একটি বিরল মুহূর্ত উন্মোচিত এবং কবিতার শেষে, যখন এর দর্শন একটা সংহতির পথে যাচ্ছে, হঠাৎ রবীন্দ্রনাথের একটি গানের পঙ্‌ক্তি ভেসে আসে, যা আসে সেই হঠাৎ আলোর ঝলকানির পথে। কবিতাটিতে এরপর অনেকগুলো মাত্রা খুলে যায়। নতুন করে পাব বলে যেন এক বিস্ময়ের পৃথিবী, যা মারুফ দেখেন একটি জানালার ভেতর দিয়ে, যে জানালাটা সংবেদনশীল চিন্তার, ভাবনার।’[৬]

প্রকাশিত গ্রন্থাবলী

  • মলাটবন্দী মন, ১৯৯৩
  • কথা না-বলার করেছি নিজস্ব পণ, ১৯৯৪
  • শূন্যপূরাণ, ১৯৯৫
  • অনন্তের অলীক অপেক্ষা, ১৯৯৬
  • জলপাথুরে, ১৯৯৭
  • নির্বাচিত কবিতা, ২০১০
  • আমি একবার বৃষ্টিকে ছুঁয়েছিলাম, ২০১৩
  • কবিতাসংগ্রহ, ২০১৪
  • Selected Poems, 2014
  • সোনাপাখি, ২০১৬
  • পুতুল পুতুল মূর্ছনা, ২০১৬
  • নিদাঘ, ২০১৬
  • শুভসকাল, ২০১৬
  • সাঁইজি, ২০১৬
  • নোনা পানি, ২০১৭
  • কমলাফুলির টিয়ে, ২০১৭
  • সোনার বাংলা মা, ২০১৭
  • নতুন করে পাব বলে, ২০১৭
  • মাত্রাবৃত্ত’, ২০১৮
  • আয়নাশহর, ২০১৮
  • আরশিনদী, ২০১৮
  • কমলাফুলির টিয়ে, ২০১৮
  • সোনার বাংলা মা’, ২০১৮
  • নির্বাচিত ১০০ কবিতা, ২০১৮
  • শুভসন্ধ্যা, ২০১৮
  • ভ্রমণবৃত্ত, ২০১৮
  • পুতুলের নাম টিয়ানা, ২০১৮
  • Fifty Poems, 2018
  • মুঠোর ভেতর রোদ’, ২০১৮
  • সাতজনের সংসার, ২০১৮
  • বিশ্বাসীও নই, ভণ্ডও নই, ২০১৯
  • দহগ্রাম, ২০১৯
  • নির্বাচিত ১০১ কবিতা, ২০১৯
  • পানতুম, ২০১৯
  • প্রত্যাশার শরীর, ২০১৯
  • শুকনো পাতার নূপুর, ২০১৯

পুরস্কার ও সম্মাননা

  • বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার ২০১৭
  • অগ্রণী ব্যাংক শিশু একাডেমী শিশুসাহিত্য পুরস্কার ১৪২৩
  • ঝুমঝুমি শিশুসাহিত্য পুরস্কার ২০১৮
  • খালেকদাদ চৌধুরী সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯
  • সেরা বইয়ের জন্য বাংলা একাডেমি প্রদত্ত শহিদ মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০১৯
  • সিটি আনন্দ আলো সাহিত্য পুরস্কার ২০১৯
  • ব্রাহ্মণবাড়িয়া সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার ২০১৯
Top